এটা কোনো সিনেমার কাহিনী নয়। লেখকের কষ্ট-কল্পনাও নয়। এ বাংলাদেশেই ঘটে যাওয়া ঘটনা। রাজধানীর এই তো একটু দূরে, গাজীপুরের শ্রীপুরে রচিত হয়েছে এ আখ্যান। নিজ কন্যার অপমান আর সহায়-সম্বল নিয়ে হয়রানির বিচার চেয়েছিলেন হজরত আলী। দ্বারস্থ হয়েছিলেন সমাজপতিদের। গিয়েছিলেন থানায়ও। কিন্তু কোথাও তিনি বিচার পাননি। এ বিচারহীনতা সহ্য করতে পারেননি হজরত আলী। প্রতিবাদের নিদারুণ পথ বেছে নেন তিনি। কন্যাকে নিয়ে ঝাঁপ দেন ট্রেনের নিচে। এ কথা হলফ করেই বলা প্রয়োজন, এমন মৃত্যু আমরা কখনো সমর্থন করি না। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেছে। শুরুতে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ রিপোর্ট অনেকের মনেই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু সরজমিন পরিদর্শন শেষে মানবাধিকার কমিশন জানাচ্ছে, ঘটনা সত্য।
নিঃসন্তান দম্পতি হজরত আলী এবং হালিমা বেগম মাত্র একদিন বয়স থেকে আয়েশা আক্তারকে নিজেদের কাছে নিয়ে লালন-পালন করতেন। মেয়েটি স্থানীয় একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো। হালিমা বেগম অভিযোগ করেছেন, মেয়ের অপমানের বিচার চেয়ে না পেয়ে হজরত আলী মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয়ার পথ বেছে নেন। শনিবার স্বামী-কন্যার এ আত্মাহুতি হালিমা বেগমকে দিয়ে গেছে নরক-যন্ত্রণা। স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে তার সামনে এখন এক ঘোর অন্ধকার। পৃথিবীতে তার আপন বলতেও এখন আর কেউ নেই। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে এখন থাকার মতো আপন আর কেউ রইলো না। আমি দুনিয়াতে এখন একেবারেই একা।’ হালিমা বেগমকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। এই পৃথিবীর কারো আছে কি না তা আমরা জানি না। কিন্তু হজরত আলীর এ আত্মাহুতি ব্যক্তিগত দুঃখ আর যন্ত্রণাকে ছাপিয়ে পরিণত হয়েছে এক জাতীয় লজ্জায়। আমরা যারা প্রতিদিন ‘আইনের শাসন, আইনের শাসন’ বলে চিৎকার দিই, তাদের জন্য কী পরিহাস হিসেবেই না এসেছে এ মৃত্যু। ক্ষমতাবাজরা প্রায়ই বলে থাকেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখন আর নেই। বিচারবিদ আর শৃঙ্খলাবিদরাও একই কথা বলে থাকেন। এসব নিয়ে বলাও মুশকিল। কিন্তু মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এখন কবুল করছেন যে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনি। সোমবার তিনি গিয়েছিলেন হজরত আলীর বাড়িতে। কথা বলেছেন, হালিমা এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে। পরে কাজী রিয়াজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, একধরনের স্বার্থান্বেষী মহল যারা দীর্ঘদিন ধরে হজরত আলীর জমি দখলের চেষ্টা করেছিল, যারা তার মেয়েকে লাঞ্ছিত করেছে, তারা এ আত্মহত্যার জন্য দায়ী। যাদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব ছিল, তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেনি। ধর্ষণচেষ্টার মামলায় যাদের কাছে সালিশ চেয়েছেন, সেই জনপ্রতিনিধিরা এ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। পুলিশ প্রশাসন এ ঘটনার পর কোনো অ্যাকশনে যায়নি। তারাও দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে না। এজন্য আমি মনে করি, এখানে যে অবহেলা হয়েছে, তা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ফৌজদারি অপরাধ। তবে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক হারুন উর রশিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, হজরত আলীর বসতভিটা দখলের চেষ্টা সম্পর্কে একটি অভিযোগ পুলিশ পেয়েছিল। অন্য কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলে জানান তিনি। এর পরও ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কন্যাকে নিয়ে হজরত আলীর আত্মাহুতির ঘটনা বাংলাদেশের সমাজে খুব বেশি আলোড়ন তুলতে পারেনি। তার মৃত্যুর মতোই এটি আরেকটি লজ্জাজনক ঘটনা। সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি অথবা শাকিব খানের বিয়ে নিয়ে এ রাষ্ট্র-সমাজে যতটা তোলপাড় হয়, হজরত আলীকে নিয়ে অতটা তোলপাড় এখনো চোখে পড়েনি। যে বিকল্প গণমাধ্যমের কথা বলা হচ্ছে, সে সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে তেমন কোনো আহাজারি নেই। মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের তবুও ধন্যবাদ প্রাপ্য, অনেক সমালোচনা থাকলেও এক্ষেত্রে অন্তত তিনি ছুটে গেছেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি কোনো দলের রাজনীতিবিদদেরই এ নিয়ে আহাজারি করতে দেখা যায়নি। এ সমাজ কি তবে সবকিছু সয়ে নেয়ার নীতিতে চলে গেছে। বিচার না পেয়ে কেউ আত্মহত্যা করবেন, সেটাও কি তবে মেনে নিতে হবে? হজরত আলীর মতো বিচার চেয়ে না পাওয়ার ঘটনা অবশ্য বাংলাদেশে ঘটছে হরহামেশাই। কত আলীরা নীরবে-নিভৃতে সয়ে যাচ্ছেন নিষ্পেষণ। বিচার পাওয়ার অধিকার যেন এখনো সোনার হরিণ। আইনের শাসন ছাড়া, উন্নয়ন যে অর্থহীন সে কথা কবুল করার মতো মানুষ বাংলাদেশে এখনো খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। হজরত আলীর অসহায় স্ত্রীর ফরিয়াদ যেন এ রাষ্ট্রব্যবস্থা শোনে- এখন সেটাই আমাদের কামনা। মানবজমিন
প্রকাশ:
২০১৭-০৫-০৩ ০৯:৪৩:৪১
আপডেট:২০১৭-০৫-০৩ ০৯:৪৩:৪১
- চকরিয়ায় ডাকাতের গুলিতে লেফটেন্যান্ট তানজিম খুন, মায়ের আহাজারী, শোকের মাতম, জানাযা সম্পন্ন
- ডুলহাজারায় সেনা কর্মকর্তা তানজিম হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ
- চকরিয়ায় নারী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় -জেলা তথ্য অফিসের
- চকরিয়ায় আ,লীগের প্রভাবে দখল হওয়া বাজার ফিরে পেতে চায় ব্যবসায়ীরা
- চকরিয়ার যুবলীগ নেতা কছিরের রয়েছে সম্পদের পাহাড়
- চকরিয়ায় ডাকাতের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হলেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা তানজিন
- ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবীতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
- চকরিয়ায় ৪৬টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি
- চকরিয়ায় ইট বোঝাই ডাম্পার ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
- চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীতে ভন্ড বৈদ্যের আবির্ভাব
- বৈষম্য মূলক নিয়োগে ফুঁসে উঠেছে চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপি!
- ডুলহাজারায় সেনা কর্মকর্তা তানজিম হত্যার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ
- চকরিয়ায় ডাকাতের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হলেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা তানজিন
- ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবীতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
- চকরিয়ার যুবলীগ নেতা কছিরের রয়েছে সম্পদের পাহাড়
- সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে চকরিয়ায় মানববন্ধন
- চকরিয়ায় আ,লীগের প্রভাবে দখল হওয়া বাজার ফিরে পেতে চায় ব্যবসায়ীরা
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহি বাস চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
- কক্সবাজারে যোগ হচ্ছে রিজিওনাল ট্রেনিং সেন্টার :
- চকরিয়ায় ৪৬টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি
- আগস্টে ৪৬৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭৬
- চকরিয়ায় নারী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় -জেলা তথ্য অফিসের
পাঠকের মতামত: